Monday, 19 May 2014

একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু

   আমাদের  হাতের নাগালেই  রয়েছে অনেক সুন্দর  ছোটখাটো  বেড়ানোর জায়গা , কিন্তু তাদের ঠিকানা রয়ে  গেছে  অজানা । আটঘরার নাম আপনারা শুনেছেন কেউ ? আটঘরায়  গিয়েছি  শুনে অনেকই প্রশ্ন করেছেন জায়গাটা কোথায়?  কলকাতা থেকে মাত্র ৬২ কিলোমিটার  দূরে  শিয়ালদহ-বনগাঁ  লাইনে  মাছলান্দপুরের  নাম  নিশ্চয়ই  সকলে জানেন, সেখান  থেকে আটো রিক্সা  বা ভ্যানে  ১০ কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে  যাওয়া যায়   আটঘরা।
২০০৭-র   ৩১শে  জানুয়ারি স্কুলের  ছাত্রী-শিক্ষিকা, করণিক  এবং তিনটি শিশু সর্বমোট ২০ জন বনগাঁ লোকালে  করে রওনা দিলাম   মাছলান্দপুরের পথে- ছাত্রীদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমনের জন্যই এই যাত্রা । ঘন্টা দু'য়েক পরে মাছলান্দপুরে নেমে মোট তিনটি আটো রিক্সা করে রওনা দিলাম আটঘরার   বিকাশকেন্দ্রের দিকে । মগরা পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভালই, মগরা বাজার ছাড়াতেই রাস্তার রূপ অতি করুণ, এবড়ো-খেবড়ো রাস্তা দিয়ে হেলতে দুলতে এগিয়ে চলা।  চোখের সামনে ভেসে ওঠা চাষের জমি, গাছপালা, গ্রাম্য জীবনযাত্রা, আর সেই সঙ্গে ছাত্রীদের  কলকাকলি  চলার শ্রান্তিকে ভুলিয়ে চলার আনন্দে যেন নতুন মাত্রা  যোগ করেছে। 
বিকাশকেন্দ্র
বেলা  ১১টা  নাগাদ এসে  পৌঁছলাম   বিকাশকেন্দ্রে।  বিকাশকেন্দ্র এক স্বেছাসেবী প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৫ সালে ১লা এপ্রিল অশোক ঘোষের নেতৃত্বে  গড়ে ওঠে এই প্রতিষ্ঠান। সঙ্গী  হিসেবে পেয়েছেন  পলাশ বর্ধন, আলাউদ্দিন আহমেদ,  শ্রীকান্ত মন্ডলের মতো একনিষ্ঠ কর্মীদের। অশোকবাবু ছিলেন ইন্ডিয়ান টুরিজিম  ডেভেলপমেন্টের রিজিওনাল ম্যানেজার। আটঘরা গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের  জন্য এদের নানাবিধ  প্রকল্প রয়েছে -- যার  মধ্যে উল্লেখযোগ্য  কৃষি, স্বাস্থ্য,শিক্ষার  উন্নতিবিধান। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি জাপান, নেদারল্যান্ড, জার্মানি থেকেও এরা সাহায্য পেয়ে থাকেন। 
আম, জাম, কাঠাল,  সুপারি, নারকেল, সবেদা, আলবেরী আরো নানান গাছে ঘেরা   বিকাশকেন্দ্রে পৌছনোর সাথে সাথে ওখানকার কর্মীদের  অভ্যর্থনা পেলাম। এই বিকাশকেন্দ্রের  ভিতরেই রযেছে  সভাকক্ষ, গ্রন্থাগার , অফিসঘর,  স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এই স্বাস্থকেন্দ্রে গ্রামের মানুষজন আসেন   চিকিৎসার  জন্য। বিকাশকেন্দ্রের  একপাশে কেন্দ্রের স্থপতি অশোক ঘোষের   আড়ম্বর  বর্জিত থাকার ব্যবস্থা। তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদি ছিলেন  দক্ষিণেশ্বর শ্রী শ্রী   সারদাদেবী বালিকা বিদ্যামন্দির  স্কুলের  প্রধান   শিক্ষিকা । তিনিও এই   কর্মকান্ডের  এক সক্রিয় কর্মী ।
বিকাশকেন্দ্র
মুড়ি,  চানাচুর, চা সহযোগে সকালের খাওয়া শেষ করে বিকাশকেন্দ্রে থেকে মাত্র দশমিনিটের  হাঁটা  পথে পৌঁছে  গেলাম  আনন্দকেন্দ্রে। গাছপালা ঘেরা  আনন্দকেন্দ্রে ঢুকতেই  প্রথমে পড়বে অতিথিনিবাস। এখানেই আমাদের  থাকার ব্যবস্থা। বিরাট ঘরে ছ'টা খাট, সংলগ্ন বাথরুম। এই স্বাস্হ্যকেন্দ্রেরই অপরপাশে রয়েছে অনাথ, শিশু, বৃদ্ধাদের থাকার সুন্দর ব্যবস্থা। এই আনন্দকেন্দ্রের  ভেতরেই সৌর শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কিভাবেই  বা জল গরম করে সেই গরম জল বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় তা দেখার মতো। অনান্দকেন্দ্রের ছাদের ওপর রয়েছে বিরাট সোলার কুকার ।
হাত-মুখ  ধুয়ে তৈরী হয়ে আবার এলাম বিকাশকেন্দ্রে, কারণ এখানেই আমাদের খাওয়া-দাওয়া সারতে হবে। সিমেন্ট দিয়ে তৈরী সুদৃশ্য গোল খাবার টেবিল ও বাসার আয়োজন। যতক্ষণ খাবার আয়োজন চলেছে আমরা সকলে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিকাশকেন্দ্রের পাশেই বিশাল চাষের জমি- তারই সামনে বসে দুটি মেয়ে ওড়নায়  জার্দৌসির সুন্দর কাজ করে চলেছে। তাদের পাশেই খেলে বেড়াচ্ছে হাঁসেরছানা । আট বছরের দিয়া ও তান আর সাত বছরের রিনুক ওর খেলার সঙ্গী। দিয়া , তান আর  রিনুকের তাড়া খেতে খেতে বেচারার নাজেহাল অবস্থা। পাশেই একমনে পরীক্ষার খাতা দেখে চলেছে বিকাশকেন্দ্রের কর্মী আজগর ভাই। পরীক্ষার খাতা দেখে স্বভাবতই  মনে কৌতুহল দেখা দিল, জিজ্গাসা করে জানলাম এখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের খাতা এগুলি। বিকাশকেন্দ্রের অন্তর্গত  পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মোট ১৫টি এই ধরণের স্কুল রয়েছে।
 দুপুরের খাওয়া শেষে রওনা  হলাম নারকেল বেড়িয়ায়ে তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লা  দেখতে। আমাদের দলের নেতৃত্বে রয়েছেন ভূগোলের  শিক্ষিকা মহুয়া ভাট্টাচার্য  এবং বিদ্যালয়ের করণিক অরুণবাবু। অরুণবাবুর কাছেই আমরা প্রথম শুনি আটঘরার নাম। ওনার সঙ্গে সন্ধ্যাদির পরিচয় অনেক কালের । যাইহোক, চারটি ভ্যান রিক্সায়  মহানন্দে সবাই মিলে উঠে বসলাম। বিকাশকেন্দ্র থেকে তিতুমীরের কেল্লার দূরত্ব প্রায় সাত-আট কিলোমিটার। ভ্যান রিক্সা চলার সাথে সাথে আমরা সকলেই হৈ হৈ  করে উঠলাম।কখনো দুপাশে গ্রামের মেঠো বাড়ির উঠোন, কখনো বা ক্ষেতের  জমি , দূর দিগন্তের আকাশ এসে  মিশেছে  মাঠের প্রান্তরে । এই সময়ে সর্ষে পেকে  উঠেছে-- মাঠে তারই সমারোহ বেশি করে চোখে পড়ে। এবড়ো-খেবড়ো   বাঁধানো রাস্তা- চার- চারখানা যাত্রী বোঝাই  ভ্যান গাড়ি দেখে গ্রামবাসীদের উৎসুক দৃষ্টি- অনেকেই  শুধায়-'কোথায় চোইলেগো তোমরা' সঙ্গে সঙ্গেই সমবেত রব ওঠে  আমাদের ভ্যান রিক্সা থেকে-- 'নারকেলবেড়িয়ায়  তিতুমীরের কেল্লা দেখতে।' মাঝে মাঝেই মেয়েদের পা থেকে খুলে পড়ে যাচ্ছে জুতো- তাই নিয়ে হাসাহাসি, মজা করা, জুতো তুলতে গিয়ে পিছিয়ে পড়া। ক্যাওশটা  বাজার এলাকা পর্যন্ত এসে ডানদিকে ভালো  রাস্তা। আমাদের ভ্যান রিক্সাওয়ালারাও মনের সুখে যে যত পারছে একে অপরকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে চলেছে -- সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ী আরোহীরা চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করছে। রামচন্দ্রপুরের কিছুটা আগে এসে আবার পথ বেঁকে গেছে ডাইনে। এবার কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই মেঠো পথ, গাড়ির ঝাঁকুনিও প্রবল- দু'পাশের চাষের ক্ষেত, পুকুর - এক নিটোল গ্রামবাংলার দৃশ্যকে সঙ্গী করে এসে পৌঁছলাম তিতুমীরের বাঁশেরকেল্লার সামনে। না,বাঁশেরকেল্লা এখন আর নেই, নীলকর সাহেবেরা কঠোর হাতে তাকে  ধ্বংস করেছে। তারই ভগ্নাবশেষ ছড়িয়ে রয়েছে এদিকে সেদিকে। এখানে পরিচয় হলো গ্রামের এক বয়স্ক ব্যক্তির সাথে, তিনি শোনালেন কৃষক বিদ্রোহের নেতা তিতুমীরের বীরত্বগাথা । নীলবিদ্রোহের ইতিহাস আমরা সকলেই জানি- তাই আলাদা করে সেকথা বর্ণনা করে লেখাকে দীর্ঘায়ত করতে চাইনা। সামনেই রয়েছে বিরাট ইমামবাড়া- গতকালই মহরমের উৎসব উপলক্ষে এখানে বসেছিল বিরাট মেলা। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল মেলায়। তিতুমীরের জন্মস্থান হায়্দারপুর থেকে তাজিয়া বের হয় এবং এখানে তাজিয়া এনে রাখা হয়। মেয়েদের নিয়ে মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরা হল। মেলার ঠিক পাশেই কৃত্রিম কারবালার যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে । যা দেখলে মনে পড়ে যাবে কারবালার প্রান্তরে হাসান-হোসেনের বীরত্বকে। মেলায় অনেকেই প্রশ্ন করেছে আমরা কোথা থেকে এসেছি, কেন এসেছি ইত্যাদি। ধীরে ধীরে বেলা পড়ে আসছে-এখন ফিরতে হবে। আবার সকলেই হৈ হৈ করে উঠে বসলাম ভ্যান রিক্সায়। একই পথে ফিরে চললাম বিকাশকেন্দ্রের দিকে। গোধুলিবেলায় দু'পাশের চাষের ক্ষেত যেন আরো মোহময় হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসছে। আর একদিন পরেই মাঘী পূর্ণিমা - আকাশে হাসি ছড়িয়ে উঠলো চাঁদের আলো। এমন অবস্থায় খুব স্বতস্ফুর্তভাবে গলা দিয়ে বেড়িয়ে এলো গান। অতি বড় বেসুরোও এমন অবস্থায় গান না গেয়ে থাকতে পারে না। 'বাঁধ ভাঙা চাঁদের হাসি'কে  গানের সুরে প্রাণ ভরে উপভোগ  করলাম।
পরের দিন ভোরে আনন্দকেন্দ্র থেকে মেয়েদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সামান্য এগিয়ে মেঠো পথ ধরে বাঁশবন , আম বনের ছায়াকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলা- পায়ে চলা পথের শেষে ক্ষেতের আলপথ ধরে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলাম কত রকমের ফসলের সম্ভারে প্রকৃতিদেবী সাজিয়ে তুলেছে নিজেকে। লাল লঙ্কায় ভরে থাকা জমি যেন লাল ফুলের গুচ্ছের মতই শোভা পাচ্ছে। তারই সবুজ ডালপালা এসে লাগছে পায়ে- মনে করিয়ে দিচ্ছে গ্রামবাংলার কবি জসিমুদ্দিনের সেই বিখ্যাত কবিতাকে--  'চলতে পথে মটরশুটি জড়িয়ে দুটি পা/ বলছে যেন গাঁয়ের রাখল একটু খেলে যা'
কত রকমের সবজি। আলু,পেঁপে , সাদা সর্ষে, কালো সর্ষে , বাঁধাকপি, ফুলকপি, ধনেপাতা, ছোটো ছোটো পটলের কুঁড়ি-- আর কিছু দিনের মধ্যেই আপন স্বরূপে যারা নিজেদের প্রকাশ করবে। দিগন্তবিস্তৃত ক্ষেতের ফসল দেথতে দেখতে আমরা শহুরে মানুষেরা সত্যিই মুগ্ধ। আলের ধার ঘেঁষে বাঁধাকপির  সারি। আমরা সকলেই প্রায় বলে উঠলাম 'ক্ষেতের কপি নিয়ে যাব'- বিকাশকেন্দ্রেই শুনেছি এখানে ফসলে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। জৈব সার দিয়েই উৎপন্ন হয় ফসল- কোলকাতা  শহরের কয়েকটি অঞ্চলে এই  ফসল বিক্রিরও  কেন্দ্র রয়েছে । তবে আর কি, চাষী ভাইকে গিয়ে ধরে পড়লাম, 'দেবে নাকি ভাই আমাদের  বাঁধাকপি।' হেসে উঠে সে বলে- 'দু'টাকা করে কিলো  নেব কিন্তু'- আর পায় কে, আমাদের ছাত্রী-শিক্ষিকা সকলেরই তখন একই  অবস্থা- কেউ দুটো, কেউ একটা নিতে নিতে প্রায় সেই জমির সব কপিই শেষ। এবারে তো ফিরতে হবে- কেউ দু'হাতে, কেউ এক হাতে নাড়ুগোপালের মতো কপি নিয়ে ক্ষেতের আলপথ ধরে আনন্দ  করতে করতে ফিরে এলাম অানন্দকেন্দ্রে ।
সমীক্ষায়   গিয়ে
স্নান, প্রাতরাশ সেরে এবারে আমাদের যেতে হবে গ্রামে গ্রামে সমীক্ষা করতে। এই কাজেও আমাদের সহায়তা করেছেন আজগর ভাই। সাইকেল নিয়ে আমাদের  সঙ্গে এসেছেন তিনি। আমাদের মেয়েরাও খাতা-পেন নিয়ে প্রস্তুত। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মেয়েরা ছড়িয়ে পড়েছে বাড়ি বাড়ি। প্রত্যেক দলের সঙ্গে রয়েছেন একজন, দু'জন শিক্ষিকা। আমার দায়িত্বে রয়েছে জনা পাঁচেক ছাত্রী । কতগুলি নির্ধারিত প্রশ্ন বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে মেয়েরা করেছে-- গৃহকর্তার নাম কি ? তাঁর লেখা-পড়া কতদূর ? মাসিক আয় কত ? বাড়িতে সদস্যের সংখ্যা কত ? ছেলেমেয়ে কটি ? গ্রামবাসীদের বেশিরভাগেরই মাটির বাড়ি , দুই একটি পাকা দালান দেখলাম। সামনে গোলাঘর এবং শতকরা ৯৫ জনই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত। প্রত্যেক বাড়িতে পেয়েছি নিবিড় আতিথেয়তা। কোনো বাড়ির গৃহকর্তা ঢেঁকিতে চাল কুটছে, কেউ বা খেজুরের রস জ্বাল দিতে ব্যস্ত। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী, কেউ কেউ আবার বিকাশকেন্দ্রে চাকরি করে। শতকরা ৯০ জন মানুষই স্বাক্ষর।
বাড়ির মেয়েরা সংসারের কাজকর্মের পাশাপাশি শাড়িতে, চুড়িদারে নকশা করে। মেয়েদের নিয়ে সমীক্ষা করতে করতে এমনিই কিছু গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হলো। রেজাক মোল্লার বাড়ির উঠোনে তাঁর বউ ফাতেমা বিবি তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে শাড়িতে নকশা করে চলেছে- কি নিপুণ হাতের কাজ ! তাদের সাথে কথা বলে জানলাম এক-একটি শাড়ি, সালোয়ার কামিজে নকশা করতে সময় লাগে একমাসেরও বেশি। মাত্র একশ টাকার বিনিময়ে দিনের পর দিন এই সুক্ষ্ম কাজ তাঁরা করে থাকে, আর শহরে দুই-আড়াই  হাজার টাকা দিয়ে আমরা কিনি সেই শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ - একেই বলে exploitation !
তিতুমীরের জন্ম ভিটে-হায়্দারপুর
সমীক্ষা শেষ করে এবারে আমরা চললাম হায়্দারপুরে তিতুমীরের জন্ম ভিটে দেখতে। বিকাশকেন্দ্র থেকে দূরত্ব ৩ কিলিমিটার মতো। পথে পড়ল নিটোল গ্রামবাংলার ছবি। এসে পৌঁছলাম তিতুমীরের জন্ম ভিটেয়। গাছপালা ঘেরা বিরাট চত্বরে অযত্নে দাঁড়িয়ে  রয়েছে এক সিমেন্টের ফলক। তাতে তিতুমীরের জন্ম, মৃত্যুর তারিখ, তাঁর বীরত্বের কিছু কথার উল্লেখ রয়েছে। তার পাশেই তিতুমীরের আত্মীয়-স্বজনের কবর। এখানে দেখা হলো তিতুমীরের পঞ্চম ও ষষ্ঠ বংশধরের সঙ্গে- নাম সৈয়দ জামসেদ আলী ও সৈয়দ মদত আলি। গ্রামে পানীয় জলের অভাব, রাস্তা-ঘাটের  করুণ অবস্থা, সেই সঙ্গে কৃষক বিদ্রোহের নেতা তিতুমীরের প্রতি সরকারের উদাসীনতায় তাদের ক্ষোভ ধরা পড়ল কথাবার্তায়।
তিতুমীরের বংশধরেরা এখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রায় ছ'ফুটের উপর লম্বা, সুঠাম স্বাস্থ্যের অধিকারী সৈয়দ মদত আলি অবশ্য মসজিদে নামাজ পড়ান। কথায় কথায় সৈয়দ জামসেদ আলীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- 'এখন আপনাদের জমি-জমার পরিমান কত? ' উত্তরে খুব সুন্দর করে তিনি বলেন, 'আগে তো অনেকই ছিল, কিন্তু এখন 'শুধু বিঘে দুই' অবশিষ্ট 'আর সবই গেছে ঋণে '-
জানিনা, ওনারা আমাদের কেউকেটা ভেবেছেন কিনা, ফিরে আসার সময় বারে বারেই অনুরোধ জানিয়েছেন যেন তাদের কথা আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিই। ফিরে আসার পথে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, বেশ কিছু প্রশ্ন দেখা দিতে থাকে মনের মাঝে। সত্যিই কি আমরা কৃষক বিদ্রোহের নেতার প্রতি কোনো সম্মান জানাতে পরেছি ? কেন আমাদের এই উদাসীনতা ?
দুপুরের খাওয়া- দাওয়া সারতে ফিরে এলাম  বিকাশকেন্দ্রে। খাওয়া সেরে যাব  চাঁদপুর  পশ্চিমে  একটি গ্রামে। সেখানে আমরা পরিচিত হব বিকাশকেন্দ্রের অন্তর্গত একটি শিক্ষাকেন্দ্রে, যেখানে প্রাথমিক স্তরে পিছিয়ে পড়া  ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা  দান করা হয়। সকালে যে পথে হায়্দারপুর গিয়েছিলাম সেই একই পথে বেশ খানিকটা এগিয়ে ডানদিকে চলে গেছে হায়্দারপুর যাবার পথ, আমরা চললাম সোজা। আমাদের সঙ্গী হয়েছে বেশ কয়েকটি  মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রী। ওরা আসছে আটঘরা  থেকে, ওদের কাছেই জানলাম আটঘরায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, উচ্চ শিক্ষার জন্য তাদের যেতে হয় কোলসুর। ওদের সঙ্গেই নানা গল্প করতে করতে পৌঁছে গেলাম চাঁদপুর পশ্চিমে লাইলী বেগমের স্কুলে। গাছপালা ঘেরা বিরাট  মাটির উঠানে খেলনার মত ছোট্ট মাটির স্কুল ঘর, কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী, দিদিমণি এবং আমরা  সকলেই উঠানে বসলাম। আমাদের দেখে চারপাশ থেকে গ্রামবাসীরা এসে উপস্থিত। দাওয়ায় কালো রঙের পলিথিন বিছানো, তার ওপরে বসে রয়েছে প্রথম থেকে পঞ্চম  শ্রেণীতে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রতিদিন দুপুর তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত চলে শিক্ষাদান পর্ব। গাছেরগুঁড়িতে হেলান দিয়ে শিক্ষয়িত্রী লাইলী বেগম। সাধারণভাবে শাড়ি পরা, মাথায় ঘোমটা, মুখে হাসি।প্রথমেই পরিচিত হলাম ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে। পরিচয় পর্ব শেষ হতে তারা এককভাবে এবং সমবেতভাবে বিভিন্ন ধরণের  খেলা, নাচ, গান পরিবেশন করলো। আমাদের ছাত্রীরাও যোগ দিল ওদের সঙ্গে। এবার ফিরতে হবে আনন্দকেন্দ্রে, আজ রাতে সেখানে হবে ক্যাম্পফায়ার। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষিকার সঙ্গে প্রায় সমস্ত গ্রামবাসী পিছু পিছু এলো বিদায় জানাতে। 'আবার আইসবা তো ?  আবার আইও'- তাদের সমবেত কন্ঠের এই অনুরোধে মন ভরে উঠলো। আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরে চললাম। ফেরার পথে আমাদের সব সময়ের সঙ্গী আজগর ভাই নিয়ে গেল 'হ্যান্ড মেইড পেপার মিল' দেখাতে। গেঞ্জির ছাট  অংশ দিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতিতে মূলত গ্রামের মহিলারা কিভাবে কাগজ তৈরী করছে তারই বিশাল কর্মকান্ড দেখে মুগ্ধ হলাম।
বিকেলে জলখাবারের পর্ব শেষ করে  আনন্দকেন্দ্রের হলঘরে শুরু হলো ক্যাম্পফায়ার। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করলেন বিকাশকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সন্ধ্যাদি। আনন্দকেন্দ্রের অনাথ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের স্কুলের মেয়েদের নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক নকশায় জমে উঠলো ক্যাম্পফায়ার। অনাথ মেয়েদের বেশিরভাগেরই  বাবা নেই, একটি আট-দশ বছরের মেয়ে  ওঁর দিদিমণির কানে কানে কি বলে গেল, তারপরই  দেখলাম দিদিমণি গেয়ে উঠলেন, 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে'-- দিদিমণির গানের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো তাঁর নাচ। পরে সন্ধ্যাদি বলেছেন শিয়ালদহ স্টেশনে ওঁকে কুড়িয়ে পেয়েছেন। এক বয়স্কা মহিলা সংসারে যার কেউ নেই, রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাও, কিন্তু ওঁরা সকলেই স্বনির্ভর।
পরদিন সকালে  ওঁরা সকলে এসে দাঁড়িয়েছিল আমাদের বিদায় জানাতে। বার বার অনুরোধ জানিয়েছে  ওঁদের কাছে আবারও  আসার। বৃষ্টি ভেজা মেঘলা দিনে ওঁদের সেই প্রতিশ্রুতি জানিয়ে ফিরে চললাম .............
                                                                                                                                             ছবি- শ্বেতা ধর        
     
    
                 

Wednesday, 1 January 2014

Rameswaram- ‘Kasi of south’

Ramanathaswamy Temple
Rameswaram, the ‘Kasi of south’ is related to our epic the  Ramayana. It is one of the twelve ‘jotirlingams’ in our country as propounded by Sankaracharyya . Among the holy shrines in India, much importance is given to mainly four places namely Badrinath in the  north, Puri in the  East, Dwaraka in the west which are dedicated to lord Vishnu  and the last one Rameswaram in the  south dedicated to lord Shiva. 
Around Rameswaram,  many tanks and temples are scattered  . It is because that Sri Rama and his army installed lingams at many places in order to worship  lord Shiva to get rid of  the sins for killing Ravana the king of Sri Lanka.   On one hand this place offers the pilgrims spiritual relief, where as general tourists like us are charmed by its scenic  beauty.
Rameswaram is an island. It has been divided by narrow sea from the main land. The rail bridge built upon this narrow sea connects Pamban railway station with Mandapam railway station.
Places to see in Rameswaram
Ramanathaswamy Temple :
Ramanathaswamy temple , situated close to the sea on the eastern side of the island. This temple stands out as a typical Dravidan in style with  magnificent three corridors with massive sculptured pillars lining them. The corridor is the longest one in Asia. It is 197 metres long on East-West, 133 metres on South-North. On both side of the corridors are plateform of  5ft. high on which stand stone pillars of 25ft. high. There are about 1212 pillars found here.  The temple has two Gopurams of 130 ft and 80ft high on eastern side and western side respectively.
Mahalakshmi  Theertham, Savithri Theertham,  Gayathri  Theertham, Saraswati Theertham, Sethu Madhava Theertham,  Gandhamadana Theertham, Kodi Theertham, Gaya Theertham , Kavatcha Theertham, Gavaya Theertham, Nala Theertham, Neela Theertham, Sangu  Theertham, Sakkara Theertham, Bramahati Vimochana Theertham, Sooriya Theertham, Chandra Theertham, Ganga Theertham,  Yamuna Theertham, Siva Theertham, Sathyamirtha Theertham, Sarva Theertham  all these 22 Theerthams   inside Rameswaram temple complex itself and each Theertham has its own significance.
The renowned corridors and vast structures of the temple and Gopuram was built by Sethupathis, rulers of Ramanathapuram in 12th century. Udayan Sethupathi, Thirumala Sethupathi, Raghunatha Sethupathi and Muthurama Sethupati are some notable rulers who built this holy temple.
The legend says that Hanuman was sent by lord Rama to bring a lingam to worship at an appointed auspicious hour. As Hanuman’s arrival was delayed, Sita moulded a lingam out of sand for Rama’s timely worship. This lingam the main deity being worshipped as Ramanathaswamy . The disappointed Hanuman was later consoled by Rama by installing the lingam brought by him a little north of Ramanathaswamy Temple.
magnificent  corridor
Agnitheertham Beach:
Calm and quite Agnitheertham beach is hardly 100 metres from Ramanathapuram temple. It is believed that lord Rama  to get rid of the sins done by killing Ravana a brahin  took a holy dip in the water of the sea at Agnitheertham.  
Ferry-service is available near Agnitheertham Beach. One can enjoy the beauty of the sea and the long view of the temple is splendid from the sea. One can view the total structure of the entrance of the temple while sailing in the sea. Ferry fare is not at all expensive.
Agnitheertham Beach
 Gandhamadana parvatham (Hill):
A hillock situated 3 kms to the north of the temple is the highest point in the island. There is a two-storied Mandapam, where Rama’s feet (Padam) is found as an imprint on a chakra. From the top of the hill a beautiful view of the town can be seen.
Legend says  that standing on the Gandhamadan hill, Sri Rama and  Sita looked over the Sri lanka the beautiful country of Ravana. The place on which Sri Rama and Sita stood was called Gandhamadana. Hanuman was the first person to watch Sri Rama and Sita viewing Sri lanka from Gandhamadan hill., that is why the Hanuman is call as “Sakhi Hanuman”. 
Gandhamadan hill-Ramjharokha
Lakshman Theertham :
Lakshman theertham is in the town near the main temple and is very big and beautiful. Lord Shiva temple is present on the bank of the temple. It is believed that Balaraman got cleansed off his Brahmma harthi dhosham here.
Lakshman theertham
Five Hanuman Temple :
Idols of  Rama, Sita and Hanuman brought from Dhanushkodi during 1964 cyclone are kept here. One can see floating stone which used to build the sethu Bridge. According to Epic Ramayana lord Rama went to Sri lanka from Rameswaran to rescue Sita from Ravana the king of the Sri lanka. Hanuman and his monkey brigades built a bridge with big rocks, this is called Setu Bridge or Ram setu.
Kothanda Ramaswamy Temple :
Only Bibhishana temple in India is situated at Kothanda, 12 km. from Rameswaram. This journey is very enjoyable. Last 2km. road goes through a lagoon with sea water on both sides of the road. It is said that Bibhisana, the brother of  Ravana surrendered to Rama here. One can have a splendid View of the sea (Bay of Bengal) from the Bibhisan Temple. 

Bibhishana temple

Bibhishana temple

 Sea-viewing from Bibhishana temple
Dhanushkodi :
Dhanuskodi is the closest point of Sri Lanka. It is 20 km. from the Rameswaram. During the British rule in India for commercial purposes Tamilians here went  to Sri Lanka to work at Tea-Estates. Train facility, telegraph office, temples and churches were all available here. It is said that there were  about 20 villages around Dhanuskodi.  Dhanuskodi was destroyed by a huge cyclone in December 1964. Originally Pamban Railway line was extended up to Dhanuskodi before cyclone. Now a days,  one can find the village of fishermen standing  on the beach enjoy a  very nice scenic beauty of the vast sea.
Tourist can travel by tempos by the side of seashore and get exiting experience. These tempos run from the place where the road ends and sandy path begins. It charges Rs/50 per head but only thing is that one  has to cover the distance standing and holding a rope. So it would be better if you book four wheel driven vehicles for this journey. You will get it from the hotel of Tamil Nadu Tourism with the cost of Rs/400 to Rs/500. It would be a memorable journey for you. You will see different birds and wild  ass standing on the sea side.
Dhanuskodi
Dhanuskodi
Dhanuskodi
Dhanuskodi
Pamban Bridge :
Pamban Bridge is the only sea bridge on the Bay of Bengal. It is the second longest sea bridge in India which stands on 145 pillars and its length is about 2.3 km. The construction of this bridge was started in the year 1911 by the East India company established by the British. The construction of the bridge is completed in the year 1913 and it was opened for the traffic in 1914. India’s biggest Road bridge is situated beside the Pamban railway bridge which was started in the year 1974 and completed in the 1988. It was inaugurated by the Ex-prime Minister Rajib Gandhi. This bridge is known as ‘Indira Setu’ named after Mrs. Indira Gandhi our Ex- Prime Minister.
Pamban Bridge
Pamban Bridge
  Festivals at Rameswaram :
Maha Sivratri (February,March- 10 days)
Vasontotsavam (May, June-10 days)
Ramalinga Prathista Utsav (June-July-10 days)
Thiru kalyana Festival (Julu- August- 17 days)
Navaratri-Dasara (August- september- 10 days)
Skanda Sashty (september, October-  6 days)
Arudhra Darshanam (December-January- 10 days)
Shopping in Rameswaram :
Wonderful handicrafts items attracts tourists to Rameswaram. The markets in Rameswaram have avenue shops selling exotic decorative masterpieces, which are very popular. Many shops near the temple of Rameswaram sell exquisite showpieces made of seashells, beads, palm leafs, etc. Different types of brash items specially  used in  puja purpose are also available there.

How to reach:
Rail- Train service are available for Rameswaram from Chnni, Maduari, Tiruchirappalli, Kanyakumari, Varanasi, Bhubaneswar and okha.
If you start  your journey from Chenni you must avail 16701 Chenni-Rameswaram Express, which depart from Chenni at 21.40 and reaching Rameswaram at 11.45 .  It will reach you Rameswaram through Pamban bridge  at day light and you can enjoy the journey through Pamban Bridge. I myself  availed  this train.
Road- State Transport corporation and state Express Transport corporation buses connect Rameswaram with the rest of the state.
Local Transport- City buses are available to connect Railway station, Ramanathaswamy temple, Pamban, Dhanuskodi etc. Cicle Rickshaws and Auto Rikshaws are also available. It would be convenient  if you book  auto Rickshaw for local  sight seeing. It may cost Rs.100/ to Rs. 150/.
Air- Madurai is the nearest Airport 174 km. away connecting Chenni, Mumbi and Bangalore. 

Sea viewing from hotel balcony
Accomodations:
There are many hotels available in Rameswaram. We stayed at  Hotel Tamilnadu, near Agnitheertham beach.  It is away from town and calm. It is also near to sea.  Still  now we cherish our stay in a Sea facing  room of the TTDC hotel in Rameswaram. 


Rameswaram as I have seen